মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের সৃষ্টির রহস্য গুরুত্বপূর্ণ। সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে ঈশ্বরের সকল মুক্তি পরিকল্পনার ভিত্তি, মুক্তির ইতিহাসের শুরু। "আদিতে পরমেশ্বর আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির কাজ শুরু করলেন" (আদি পুস্তক ১:১)। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা।
সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়েও স্বাধীন ইচ্ছার বলে মানুষ পাপ করেছে। মানুষের পাপের ফলে ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির সৌন্দর্য নষ্ট বা ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংসের হাত থেকে মানুষকে উদ্ধার করতেই ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে প্রেরণ করেছেন। পুত্রের আগমনে সৃষ্টি-রহস্যের পূর্ণতা লাভ করেছে। প্রথম অধ্যায়ে ঈশ্বরের অদ্বিতীয় পুত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। আদি থেকেই খ্রীষ্ট যীশুতে এই নব সৃষ্টির রহস্য স্থির করে রাখা হয়েছিল।
জগৎ সৃষ্টির পূর্বে কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের কোনো কিছুর সহায়তারও প্রয়োজন হয়নি। সৃষ্টির মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর সর্বময় ক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। তিনিই সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর। ঈশ্বর ছয় দিনে জগৎ ও মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম করেছেন। প্রতিদিনের সৃষ্টির পর ঈশ্বর সৃষ্টির দিকে তাকিয়েছেন। তাঁর চোখে সেসব 'উত্তম' হয়েছে। ষষ্ঠ দিনে, সব সৃষ্টির শেষে, তিনি 'সমস্তই অতি উত্তম' বলে ঘোষণা করেছেন (আদি পুস্তক ১:৩১)। তাই আমরা বলতে পারি ঈশ্বরের সৃষ্টি উত্তম।
"পরমেশ্বর তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন; পুরুষ ও নারী করে তাদের সৃষ্টি করলেন।" মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এর প্রধান কারণ হলো, ঈশ্বর তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে দিয়েছেন নিজের রূপ, প্রকৃতি ও স্বভাব। মানুষের মাঝে ঈশ্বর নিজেকেই প্রকাশ করলেন। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলেন।
সৃষ্টির অন্যান্য বস্তু ও প্রাণী থেকে মানুষ আলাদা। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সে অনন্য। মানুষ কোনো বস্তু নয় বরং ব্যক্তি। দেহ, মন ও আত্মায় এক অনন্য সৃষ্টি। মানুষের আছে জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, বিবেক ও ইচ্ছাশক্তি। মানুষ আত্মমর্যাদার অধিকারী। জ্ঞান ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষ ঈশ্বরের মহত্ত্বকে আবিষ্কার করতে পারে। তাঁর মহানুভবতাসে অনুভব করতে পারে, তাঁর গৌরব ও প্রশংসা করতে পারে। একমাত্র মানুষই সৃষ্টিকর্তাকে জানতে ও ভালোবাসতে পারে।
সৃষ্ট মানুষের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাকে পুরুষ ও নারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই নর ও নারী উভয়েই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে গড়া মানুষ। মানব ব্যক্তি হিসেবে নর ও নারী সমমর্যাদার অধিকারী। আবার নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে তাঁরা নারী ও পুরুষ। তাঁরা কেউ কারোও অধীন নয় বা একজন আরেকজন থেকে ছোটো বা বড়ো নয়।
ঈশ্বর মানুষকে পুরুষ ও নারী করে সৃষ্টি করেছেন যেন তারা একে অপরের জন্য পরিপূরক হতে পারে। "মানুষের পক্ষে একা থাকা ভালো নয়; তাই আমি তার জন্যে এমনই একজনকে গড়ে তুলব, যে তাকে সাহায্য করবে, তার যোগ্য সঙ্গী হবে" (আদি পুস্তক ২:১৮)। ব্যক্তি হিসেবে তাঁরা একক আর নারী ও পুরুষ হিসেবে তাঁরা পরস্পরের সহায়ক বা পরিপূরক। তাঁরা উভয়েই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অতি উত্তম।